একজন আপু

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

তুসিন আহমেদ
  • ১০
  • ১২
আপুকে প্রায়ই দেখতাম বালিশে মাথা রেখে কান্না করত। মাঝে মাঝে দেখতাম বারান্দায় দাড়িয়ে কি যেন ভাবত। মাঝে মাঝে যখন বৃষ্টি হত, দেখতাম আপু লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করত কেউ কাছে আসলে চোখের পানি মুছে ফেলত।
ব্যাপারগুলো বাসার কেউ বুঝতে পারত না। কিন্তু আমার চোখে ঠিকই ধরা পড়ত। কখনো আপুর কাছে জানতে চাইতাম না কি হয়েছে আপুর। ভাবতাম আপুর কাছে যদি জানতে চাই তাহলে আপুর হয়ত মন খারাপ হয়ে যাবে আরও বেশি। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার অনেক জানতে ইচ্ছা করত কি হয়েছে আপুর??
আমার সাথে আপুর বয়সের ব্যবধান ৭ বছরের। আপু তখন ভাসিটিতে তৃতীয় বছরের পড়ছে তখনকার ঘটনা। আপুকে যখন কাঁদতে দেখতাম তখন আমার অনেক কান্না পেত। কেন যেন নিজের অজান্তে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ত। আপনজন কাউকে কাঁদতে দেখলে বেশি খারাপ লাগে। আর আমার পরিবারে আপুই আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করত। তাই আপুর প্রতি আমার বিশেষ মায়া ছিল। আমি যা চাইতাম আপু আমাকে তা কিনে দিত। আমি যদি খুব দামি কোন খেলনা চাইতাম আপু নিজের টাকা জমিয়ে জমিয়ে আমাকে কিনে দিত। এক কথায় ধরতে গেলে আপুই আমার পৃথিবী। কিন্তু আপুর হঠাৎ এই চুপচাপ ভাবে থাকাটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। আগে আপু কত হাসত এখন আমার কথায় উত্তর হ্যাঁ হু-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখছে আপু। আগের ঘুমানো সময় আপুর কাছে গল্প শুনে ঘুমাতে যেতাম ।
এখন গল্প শুনতে বললে আপু বলে,”আমি গল্প ভুলে গেছি”
মন খারাপ করে ঘুমাতে যেতাম। আর ভাবতাম আপুর কি হয়েছে? আমার এত ভাল আপুটার কি হয়েছে? বাসার অন্য সবার সাথে আপু এত বেশি মিশত না। সারা দিন নিজের বাসায় পিসি সামনে বসে থাকত না হলে পড়াশুনায় মগ্ন থাকত।
একদিন আমি ক্লাস থেকে বাসায় আসলাম । আপুর জন্য ডেইরী মিল্ক নিয়ে এসেছিলাম। আপু চকলেট খেতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই ভাবলাম চুপি চুপি আপুর রুমে গিয়ে বালিশের নিচে চকলেট রেখে দিব। আপু যখন দেখবে তখন অবাক হয়ে যাবে। তাই আমি আস্তে আস্তে আপুর রুমে গেলাম। দরজা একটু ফাকা করতে দেখি আপু পিসিতে বসে আছে। আমি আস্তে আস্তে দেখলাম আপু ফেসবুকে কাউর সাথে চ্যাট করছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম আপু কি-বোর্ডে লিখছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমার আসার শব্দ শুনে আপু তাড়াতাড়ি রুমাল দিয়ে চোখে মুছে বলে,” ওহ তুই ??” এরপর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল। যাওয়ার সময় আপু ফেসবুক থেকে লগআউট হয়নি। আমি এই সুযোগে আপুর ফেসবুকে দেখলাম একটি ছেলের সাথে চ্যাট করছে। ছেলেটি নাম লিখা “নীল রহমান “ আমি চ্যাট গুলো পড়া শুরু করলাম।
সবশেষে লেখাটি আপু লিখছে ”তুমি কি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবে??”
নীল ,” হ্যাঁ আজ থেকে আমাদের ব্রেক-আপ”
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে কী হয়েছে। আপুর মন খারাপের তাহলে এইটাই কারণ। হঠাৎ আপু চলে আসল এবং আপু বুঝে ফেলল আমি আমার ফেসবুকে চ্যাটগুলো পড়েছি।
আমার আমার কাছে এসে আমাকে একটা চড় দিয়ে বলল, "যা বাগ এখান থেকে"।
আমি আপুর চোখ দু’টোর দিকে তাকালাম। আপুর চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। দেখিই বুঝা যাচ্ছে আপু অনেক কান্না কাটি করছে । আপু এই প্রথম আমাকে মারল। কখনো আমার গায়ে হাত দেয়নি আপু। সত্যি আমার অনেক খারাপ লাগব। নিজের রুমে এসে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। একটা ছেলের জন্য আপু আমাকে মারল, আমি কি এত খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু মাথায় আসা শুরু করল। সেই দিনের পর থেকে আপুর সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে থাকল।
এর দু'মাস পরের ঘটনা।
আগে আপুর জন্য বিয়ে দেখলে আপু বলত আমি এখন বিয়ে করব না। আগে পড়াশুনা শেষ করি। আমার কি কোন পছন্দ থাকবে না ইত্যাদি টাইপের কথা বলত। কিন্তু এখন আপু সেই রকম কোন কথা বলে না । আম্মু – আব্বু যদি বলে আজ তোকে ছেলে দেখতে আসবে আপুর দেখতাম কোন ফিল ছিল না। বলত ,”ওহ আচ্ছা”।
এর কিছুদিন পর আমার আপুটির বিয়ে হয়ে গেল ব্যাংকার একটা ছেলের সাথে। বাবা -মা যা বলছে তাই করেছে। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি আপুর চোখে –মুখে সেই আনন্দ মাখা অনুভূতিটা নেই। এখনো মনে আছে বিয়ের আগের দিন রাতে আপু কিছু সময়ের জন্য ফেসবুকে বসেছিল এবং ফেসবুক থেকে উঠে আপু ওয়াশরুমে গেল। বুঝতে বাকি রইল না আমার। সবার সামনে কান্না করার ভয়ে ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর আমি দেখি আপুর দু’চোখ লাল হয়ে আছে । সত্যি সেই দিন অনেক খারাপ লাগল। আপু সেই কান্না মাখে মুখটা আমি আজও ভুলতে পারব না। এরপর যথারীতি আপু চলে গেল অন্যের বাড়িতে। আমি বাসায় একা। আপুর সাথে মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হয়। কিন্তু কখনো জানতে চাই না । বুঝতে পেরেছে ফেসবুকে কাউকে আপু খুব বেশি ভালবাসত। সেই ছেলেটির জন্য বেশি আসফোস হচ্ছে আমার আপুটির মত একজন ভাল মানুষকে হারাল। আমার সেই আগের আপুটিকে ফিরে পেতে চাই এখনো। যে আপুটি আমাকে গল্প বলে ঘুম পড়াবে। আমার জন্য টাকা জমিয়ে খেলনা এনে দিবে। বাবা বকা দিলে আমার চোখের পানি মুছে দিবে। যখন রেজাল্ট খারাপ করতাম আপুর কাছে এসে হাউমাউ করে কান্না করতাম। আর আপু চোখের পানি মুছে দিয়ে বলত দূর বোকা কাঁদতে হয় নাই। পরের বার ভাল করবি। এটা ফেইসবুকের ঘটনা কেমন করে যেন আপুকে আমার কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক খুব সুন্দর আর বর্তমান সময়োপযোগী একটা গল্প...ভালো লাগলো....
তাপসকিরণ রায় এমনি ঘটনা অহরহ ঘটছে--তবু বলতে হবে,কাহিনী বিন্যাসে লেখক সফল হয়েছেন।তাঁর ভাবনা পাঠকের হৃদয় ছুঁতে পেরেছে।লেখককে জানাই অনেক ধন্যবাদ।
মোঃ ইয়াসির ইরফান খুব......খুব......খুব...... ভালো ।
এশরার লতিফ প্রথম জীবনের তুমুল আবেগ আর তীব্র মনোকষ্ট নিয়ে একটি ঘন অনুভূতিময় লেখা। ভালো লাগলো।
আলোকবর্তিকা ভাল লাগলো ভাইয়া। এ রকম অনেক প্রতারনা অনবরত ঘটছে।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
এফ, আই , জুয়েল # ফেসবুক এক নোতুন দুনিয়া----নোতুন বিস্ময় । এখানকার মিথ্যা , প্রতারনা আর চাতুরী গুলো অনবরত রঙ-রুপ বদলায় অতি নিপুনতার সাথে । এই দুনিয়ায় চলতে গেলে বিশ্বাসকে প্রটেকশন দিতে হয় । আর হৃদয়কে তাকওয়ার পোষাকে আবৃত করতে হয়-----, তানা হলে ধোঁকা থেকে বেড়িয়ে আসা কঠিন হয়ে যেতে পারে ।। গল্প ভাল---ধন্যবাদ ।।
এই দুনিয়ায় চলতে গেলে বিশ্বাসকে প্রটেকশন দিতে হয় । খুব সুন্দর একটি কথা বলেছেন। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
রফিক আল জায়েদ ফেসবুকটা একটা কঠিন জিনিস। গল্প ভাল লেগেছে।
মোঃ কবির হোসেন তুসিন আহমেদ ভাই গল্প লেখার ধরন চমত্কার. গল্পটি ভাল লেগেছে. ধন্যবাদ.
আপনার ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগল
সুমন প্রেমের সম্পর্কগুলো আসলে এমনই হয়। একটা বিশ্বাস আর ভক্তি থেকেই গড়ে ওঠে... চলতি পথে যদি কখনো একজনের সে ভক্তি নষ্ট হয়ে যায় অপরজনের বুকের ভেতরে সেটা গভীর দাগ রেখে যায়। কষ্টময় গল্প বেশ ভাল লিখেছ।
কানিজ ফাতিমা লতা তুসিন, খুব সুন্দর হয়েছে।

০৯ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪